X

Type keywords like Social Business, Grameen Bank etc.

প্রফেসর ইউনূস ও কুয়েতের আমিরের মধ্যে বৈঠক

প্রফেসর ইউনূস ও কুয়েতের আমিরের মধ্যে বৈঠক

প্রেস রিলিজ

PROFESSOR YUNUS MEETS AMIR OF KUWAIT

৮ মার্চ ২০১৬ কুয়েতের আমীরের প্রাসাদ “দেওয়ান আমিরি”-তে আমির মহামান্য শেখ সাবাহ্ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ্-এর সাথে নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। 

কুয়েতের আমির মহামান্য শেখ সাবাহ্ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ্ ৮ মার্চ ২০১৬ নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে তাঁর প্রাসাদ “দেওয়ান আমিরি”-তে অভ্যর্থনা জানান। প্রফেসর ইউনূস কুয়েত সরকারের আমন্ত্রণে ৩ দিনের সফরে কুয়েতে অবস্থান করছেন।

পঁয়তাল্লিশ মিনিটের এই বৈঠকে প্রফেসর ইউনূস কুয়েতে অবস্থানরত হাজার হাজার বাংলাদেশীকে সেখানে থাকার ও চাকুরীর মাধ্যমে তাদেরকে ও বাংলাদেশে তাদের পরিবারকে সহায়তার সুযোগ দেবার জন্য মহামান্য আমিরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আমিরকে এই বন্ধু-প্রতিম দেশে আরো বেশী বাংলাদেশী কর্মীদের কাজের সুযোগ দেবার জন্য কুয়েতের দরজা উন্মুক্ত রাখতে অনুরোধ জানান। মহামান্য আমির কুয়েত সফরের জন্য প্রফেসর ইউনূসকে ধন্যবাদ জানান। আমির বলেন যে, দরিদ্র মহিলাদের উন্নয়নে প্রফেসর ইউনূসের অসামান্য কাজের জন্য তিনি সবসময়ই তাঁর গুণগ্রাহী। তিনি বলেন যে, “আমি পৃথিবীতে দারিদ্র নিয়ে, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে দারিদ্র নিয়ে চিন্তিত।” তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, পৃথিবী থেকে দারিদ্র দূর হবে, তবে তিনি দরিদ্রদের ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মহলের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি জানান যে, দরিদ্রদের জন্য তিনি যথাসাধ্য কাজ করার চেষ্টা করছেন এবং কুয়েতে দরিদ্রদের জন্য আরো কাজ করতে তিনি প্রফেসর ইউনূসের পরামর্শ চান। প্রফেসর ইউনূস “কুয়েত ফান্ড”-এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রদত্ত উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য মহামান্য আমিরকে ধন্যবাদ জানান এবং তাঁকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। আমির জানান যে, বাংলাদেশে সফরে যাবার তাঁর খুবই ইচ্ছা, কিন্তু শারিরীক কারণে তিনি খুব একটা ভ্রমণ করতে সক্ষম নন।

প্রফেসর ইউনূস মহামান্য আমিরের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. ইউসেফ আল-এব্রাহীমকে, যিনি আমিরের সাথে প্রফেসর ইউনূসের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কুয়েতের সামাজিক খাতের উন্নয়নে কর্মসূচি প্রণয়নে প্রফেসর ইউনূসের সাথে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দেবার জন্য প্রস্তাব করেন। প্রফেসর ইউনূস প্রস্তাব দেন যে, বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় সামাজিক ব্যবসা দিবসে ড. এব্রাহীমের যোগদানের মধ্য দিয়ে এই সহযোগিতা শুরু হতে পারে। তিনি “কুয়েত ফান্ড” এবং “কুয়েত ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোগ ফান্ড”-এর মধ্যে “সামাজিক ব্যবসা ফান্ড” সৃষ্টির প্রস্তাব করেন এ্বং প্রথমোক্ত দুটি ফান্ডের ৫% এই উদ্দেশ্যে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দেন। তিনি কুয়েতের যুব সমাজকে সামাজিক ব্যবসা ও উদ্যোক্তার ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন করাটা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি “সামাজিক ব্যবসা কেন্দ্র” প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব করেন।

কুয়েতের আমির মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ও বিশাল উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে, উদ্বাস্তুদের জন্য তিনি যথাসাধ্য সহায়তার চেষ্টা করছেন, কিন্তু সমস্যাটি প্রতিদিনই গভীরতর হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই অর্থহীন সংঘাত বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট জাতিগুলোর মধ্যে শীঘ্রই সুবুদ্ধির উদয় হবে।

ঐ দিনই প্রফেসর ইউনূস কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী মহামান্য শেখ জাবের আল-হামাদ আল-সাবাহ্-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর সফরের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন এবং বাংলাদেশীদের কুয়েতে বসবাস ও কাজের সুযোগ দেবার জন্য ধন্যবাদ জানান। প্রফেসর ইউনূস কুয়েতে বাংলাদেশী চাকরী প্রত্যাশীদের জন্য ভিসার কড়াকড়ি বিষয়েও কুয়েত প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

প্রফেসর ইউনূস কুয়েত রাষ্ট্রের জাতীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট জনাব আলী মারজুক আল-ঘানিম-এর সাথেও এক বৈঠকে মিলিত হন, যিনি প্রফেসর ইউনূসকে জাতীয় পরিষদের একটি প্রতিরূপ উপহার দেন। জাতীয় পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতৃস্থানীয় সদস্যও এই বৈঠকে যোগদান করেন এবং আলোচনায় অংশ নেন।

ঐ দিন সন্ধায় প্রফেসর ইউনূস কুয়েত চেম্বার অব কমার্সের জনাকীর্ণ হলরুমে এক গণ বক্তৃতা প্রদান করেন। কুয়েত সরকারের ক্যাবিনেট সদস্যদের প্রায় অর্ধেক, কুয়েতের শীর্ষস্থানীয় সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ী নেতবৃন্দসহ শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ এই বক্তৃতা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রফেসর ইউনূস তাঁর বক্তৃতায় কুয়েতে বাংলাদেশীদের বসবাস ও চাকরীর সুযোগ দেবার জন্য কুয়েতের জনগণ ও সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং কুয়েতে আগমনেচ্ছু বাংলাদেশীদের জন্য সে দেশের দরজা উন্মুক্ত রাখার জন্য অনুরোধ জানান। বক্তৃতা শেষে উপস্থিত অভ্যাগতরা দাঁড়িয়ে তুমুল করতালির মাধ্যমে প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানান।

এর আগে ৭ মার্চ ২০১৬ প্রফেসর ইউনূস ৬০ জন নেতৃস্থানীয় উদ্যোক্তার একটি নৈশভোজ ও বৈঠকে যোগদান করেন ও বক্তব্য রাখেন। তিনি তাঁর বক্তৃতায় কেন তরুণদের চাকরী খোঁজার পরিবর্তে বরং উদ্যোক্তা হওয়া উচিত - এ বিষয়ে তাঁর যুক্তি ব্যাখ্যা করেন।

৯ মার্চ ২০১৬ প্রফেসর ইউনূস কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের সাথে অতিবাহিত করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে গণ বক্তৃতা প্রদান ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র ও শিক্ষকদের সাথে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন।